পেটেন্ট সম্পর্কিতঃ
পেটেন্ট কি?
পেটেন্ট হচ্ছে একচেটিয়া অধিকার, কোনো কিছু উদ্ভাবনের জন্য এটা অনুমোদন করা হয়।
উদ্ভাবনটি হতে পারে একটি পণ্য বা একটি প্রক্রিয়া ,যা কোনো কিছু সম্পাদনের নতুন পদ্ধতি প্রদান করে বা কোনো সমস্যার নতুন কারিগরী সমাধান প্রস্তাব করে। একটি পেটেন্ট, এর মালিককে তার উদ্ভাবনের সুরক্ষা প্রদান করে। সীমিত সময়ের জন্য এই সুরক্ষা বলবৎ থাকে, সাধারণত ২০ বছর পর্যন্ত। [ footnote(1)]
পেটেন্ট কেন প্রয়োজন?
বিপণনযোগ্য উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতার স্বীকৃতি ও বস্তুগত পুরষ্কার প্রদানের মাধ্যমে পেটেন্ট ব্যক্তি বিশেষকে উদ্দীপ্ত করে। এই পুরষ্কার পুনরায় নতুন কিছু প্রবর্তনে উৎসাহ জোগায়, যা মানুষের জীবন-যাপনের মান ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে যায়।
কোন ধরনের সুরক্ষা প্রস্তাব করে পেটেন্ট?
পেটেন্ট সুরক্ষার অর্থ হচ্ছে পেটেন্ট মালিকের অনুমতি ছাড়া তার উদ্ভাবনটি বাণিজ্যকভাবে তৈরি, ব্যবহার, বিতরণ বা বিক্রি করা যাবে না। পেটেন্ট সংশ্লিষ্ট অধিকারগুলো সাধারণত কার্যকর করে আদালত, যে প্রতিষ্ঠান অধিকাংv শ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পেটেন্ট লঙ্ঘন বন্ধের কর্তৃত্ব রাখে। আবার, আদালত তৃতীয় কোনো পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে একটি পেটেন্টকে অবৈধও ঘোষণা করতে পারে।
পেটেন্ট মালিকের কি অধিকার রয়েছে?
পেটেন্টকৃত উদ্ভাবনটি অনুমোদিত সময়ের মধ্যে কে বা কারা ব্যবহার করতে পারবে বা কারা পারবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার একজন পেটেন্ট মালিকের রয়েছে। পেটেন্ট মালিক পারস্পারিকভাবে সম্মত কোনো চুক্তির মাধ্যমে অন্য কোনো পক্ষকে তার উদ্ভাবনটি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন বা লাইসেন্স প্রদান করতে পারেন। এছাড়া পেটেন্ট মালিক তার উদ্ভাবনটির অধিকার অন্য কারও কাছে বিক্রিও করতে পারেন, যার কাছে বিক্রি করবেন তিনি হবেন ঐ পেটেন্ট’র নতুন মালিক। পেটেন্ট’র মেয়াদ শেষ হলে এর সুরক্ষাও শেষ হয় এবং উদ্ভাবনটি তখন জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত হয়ে যায়, অর্থাৎ এর উপর মালিকের একচেটিয়া অধিকার আর থাকে না, অন্যরা নিজেদের সুবিধা মতন কাজে লাগিয়ে বানিজ্যকভাবে সেটা ব্যবহার করতে পারে।
প্রতিদিনকার জীবনে পেটেন্ট কি ভূমিকা রাখে?
পেটেন্টকৃত উদ্ভাবন আসলে মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রেই ছড়িয়ে আছে-বৈদ্যুতিক বাতি (পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী: এডিসন ও সোয়ান) থেকে প্লাস্টিক (পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী:বেকল্যান্ড), বলপয়েন্ট কলম (পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী:বিরো) থেকে মাইক্রো প্রসেসর (উদাহরণস্বরুপ পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী:ইন্টেল)।
বিশ্বের কারিগরী জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধি করতে পেটেন্ট সুরক্ষার বিনিময়ে সব পেটেন্ট মালিক তাদের উদ্ভাবন সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য থাকেন। ক্রমবর্ধমান এই জ্ঞান ভাণ্ডার অন্যদের মধ্যে আরো বেশি সৃষ্টিশীলতা ও নতুন উদ্ভাবনের প্রসার ঘটায়। এভাবে, পেটেন্ট কেবল এর মালিককে সুরক্ষা প্রদান করে না, একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গবেষক ও উদ্ভাবকদের মূল্যবান তথ্য দিয়েও অনুপ্রাণিত করে।
কোন ধরনের উদ্ভাবনগুলো সুরক্ষা করা যায়?
পেটেন্ট’র মাধ্যমে সুরক্ষিত হতে হলে একটি উদ্ভাবনকে অবশ্যই কিছু শর্তপূরণ করতে হবে। উদ্ভাবনটির বাস্তবিক ব্যবহার থাকবে; এতে থাকবে অভিনব কিছু উপাদান, অর্থাৎ নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যেগুলো ওই কারিগরি ক্ষেত্রে বিদ্যমান জ্ঞান ভান্ডারে অপরিচিত। বিদ্যমান জ্ঞান ভান্ডারকে বলা হয় ‘প্রায়র আর্ট’(Prior Art)। একটি উদ্ভাবনে অবশ্যই থাকতে হবে একটি উদ্ভাবনকুশল পদক্ষেপ বা ধাপ যেন গড়পড়তা জ্ঞানসহ সংশ্লিষ্ট কারিগরি শাখার কেউ তা অনুমান করতে না পারেন। চুড়ান্ত বিচারে, আইন অনুসারে এর বিষয়বস্তু ‘পেটেন্টযোগ্য’ বলে স্বীকৃত হতে হবে। অনেক দেশেই সাধারণত বৈজ্ঞানিক তত্ব, গাণিতিক পদ্ধতি, উদ্ভিদ বা প্রাণীর ভিন্ন প্রজাতি, প্রাকৃতিক বস্তু আবিষ্কার, বাণিজ্যিক পদ্ধতি বা চিকিৎসা সেবার পদ্ধতি (চিকিৎসা সামগ্রী ব্যতিত) পেটেন্টযোগ্য নয়।
আগামী পর্বে থাকবে-
*কে
পেটেন্ট অনুমোদন করে?
*পেটেন্ট কিভাবে মঞ্জুর করা হয়?
*কীভাবে পেটেন্ট আবেদন করা যায়
Footnotes:
1.পেটেন্ট,ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর
0 Comments