পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পান্ডুলিপি কোনটি জানেন? এটি হল কোডেক্স গিগাস (Codex Gigas) বা আক্ষরিক অর্থে "বিশালাকার বই" যাকে 'শয়তানের বাইবেল' (Devils Bibel) ও বলা হয়। যা পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় হাতেলেখা বই হিসেবে পরিচিত।
৩১০ পৃষ্ঠার এই শয়তানের বাইবেল টি ৩ফুট লম্বা এবং ২০ ইঞ্চি প্রশস্ত ও ৮.৭ ইঞ্চি মোটা। এটি ১৬০টি গাধা বা বাছুরের চামড়ার উপর লিখিত এবং এর ওজন ১৬৫পাউন্ড।বইটি স্থানান্তর করতে প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ২জন মানুষ।
এই শাস্তি থেকে মুক্তি পাবার জন্য তাকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়, যে তাকে এক রাতের মধ্যে তার অর্জিত সমস্ত জ্ঞান দিয়ে একটি বই লিখতে হবে। যাতে মানুষের উপকারি সকল জ্ঞান এবং বাইবেলের গুনগান থাকবে যাতে তাদের আশ্রমটি বড় তীর্থস্থানে পরিণত হয়। সন্নাসি এই প্রস্তাব মেনে নেয়।
লেখার সকল উপকরন নিয়ে সে এক সন্ধায় লেখা শুরু করে। মধ্য রাত পার হবার পর সে দেখে তার লেখা অর্ধেকও হয়নি,সে বুঝতে পারে একরাতে এটি শেষ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।অবশেষে সে এক আশ্চর্যজনক কাজ করে বসে, সে শয়তানের সাহায্যে কামনা করে এবং চুক্তি করে যে বইটি এক রাতে শেষ
করে দিলে তার আত্মা শয়তানকে দিয়ে দেবে। শয়তান রাজি হয়।একরাতের মধ্যে শেষ করে দিয়ে যায় সেই বিশালাকার পান্ডুলিপি এবং প্রমানস্বরুপ একটি পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে রেখে যায় তার এক ছবি।
পরদিন সকালে অন্যান্য সন্নাসিরা তার কক্ষে এসে বিশাল আকৃতির এক পান্ডুলিপি দেখতে পায় যাতে শর্তমত সকল তথ্য আছে। এবং তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এই হল কোডেক্স গিগাস এর প্রচলিত মিথ।
এত জল্পনা কল্পনার এই বইটিতে লেখা রয়েছে- বাইবেলের দুইটি খন্ড,একটি ক্যালেন্ডার, এনসাইক্লোপিডিয়া,জাদুবিদ্যা,কালাজ্বর,মৃগিরোগ সারানোর উপায়সহ কিছু চিকিৎসামূলক তথ্য,একটি স্বর্গীয় শহরের ছবি এবং একটি সম্পুর্ন পাতায় চিত্রিত শয়তানের অবয়ব,এক্সরসিজম এবং চোর ধরার(!) পদ্ধতি সম্বলিত তথ্যসহ ১১টি কন্টেন্ট।
নানা গবেষনার চলছে এই বইকে ঘিরে।ধারনা করা হয় বইটি লিখতে ২৫-৩০ বছর সময় লেগেছে। তবে হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্টরা লেখার সুবিন্যস্ত ধারা বিশ্লেষন করে মতামত দিয়েছেন এটি একজন মানুষের দ্ধারাই লেখা হয়েছে।
পান্ডুলিপিটি বর্তমানে সুইডেনের স্টকহোম এর ন্যাশনাল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে এবং এটি সবার দেখার জন্য উন্মুক্ত। তাই সেখানে যাবার সুযোগ হলে বইটি দেখে আসতে ভুলবেন না।
যাওয়ার সুযোগ না হলেও বইটির ভার্চুয়াল কপি তো দেখে নিতেই পারেন। এখান থেকে দেখে নিতে পারেন সেই রহস্য ঘেরা কোডেক্স গিগাস!
0 Comments